শঙ্করাচার্য এর জীবনী

🌟 পরিচিতি

নাম: শঙ্করাচার্য (Adi Shankaracharya)
জন্ম: ৮০০ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে
জন্মস্থান: কালাদি, বর্তমান কেরালা, ভারত 🇮🇳
মৃত্যু: ৮৫০ খ্রিস্টাব্দ
ধর্ম: হিন্দু ধর্ম
বিখ্যাত কাজ: আধ্যাত্মিক গুরু, আদ্বৈত বেদান্তের প্রতিষ্ঠাতা, বেদান্ত দর্শন, মঠ প্রতিষ্ঠা।
অন্য নাম: শঙ্করা, শঙ্করাচার্য মহাপ্রভু।


👶 শৈশব এবং প্রাথমিক জীবন

শঙ্করাচার্য ছিলেন এক মহান আধ্যাত্মিক গুরু, যিনি ভারতীয় দর্শন ও হিন্দু ধর্মের অগ্রগতি ঘটিয়েছিলেন। তিনি ৮০০ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের কালাদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল শিবগুরু এবং মাতার নাম ছিল অগ্নিষ্বা। তাঁর শৈশবকাল ছিল অদ্ভুতভাবে উদ্ভাবনী এবং বুদ্ধিদীপ্ত।

শঙ্করাচার্য মাত্র ৮ বছর বয়সে উপনিষদ এবং বেদান্ত গ্রন্থ পাঠ করতে শুরু করেন, এবং তার চমৎকার জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা সকলকে অভিভূত করেছিল। তার পিতা ছিলেন এক সাধক, যিনি তার শৈশবকালে শঙ্করাচার্যকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও জীবনদর্শন শিখিয়েছিলেন। তার প্রথম গুরু ছিলেন গুপ্তগুরু


🧘‍♂️ আধ্যাত্মিক সাধনা ও গুরুতত্ত্ব

শঙ্করাচার্য যখন মাত্র ১৬ বছর বয়সে, তিনি আধ্যাত্মিক পথ অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং গুরু খোঁজার জন্য বের হন। তিনি অদ্বৈত বেদান্ত (Advaita Vedanta) দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। শঙ্করাচার্য বিশ্বাস করতেন যে, পৃথিবীর সব কিছু এক অদ্বিতীয় সত্তা বা ব্রহ্মের অংশ। তাঁর দর্শন অনুযায়ী, জগৎ এবং সত্তা এক ও অভিন্ন—এটি ছিল তার মূল মতবাদ।

শঙ্করাচার্য যখন দুনিয়া সফর করতে শুরু করেন, তখন তিনি ভারতে অনেক জ্ঞানী মহাপুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর শিক্ষা আরও গভীর করেন। তিনি এমনভাবে দর্শন শিখিয়েছিলেন, যা ভারতে ধর্মীয় বৈষম্য, কুসংস্কার এবং বিভাজন দূর করার প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল।


📜 আদ্বৈত বেদান্ত দর্শন

আদ্বৈত বেদান্ত হলো শঙ্করাচার্যের প্রতিষ্ঠিত দর্শন, যা মূলত বলে যে, এই পৃথিবীর সব কিছু এক সত্তা—ব্রহ্মের প্রকাশ। তিনি বলতেন, "একমাত্র ব্রহ্মই বাস্তব, সব কিছু মায়া বা অবাস্তব।" এর মানে, যে পৃথিবী আমরা দেখি তা আসলে এক রূপের মায়া, যা একমাত্র ব্রহ্মের প্রতিফলন।

শঙ্করাচার্য অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের মাধ্যমে মানুষকে আত্মবিচারের পথে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে আত্মা (অথবা আত্মা) এবং পরমাত্মা (ব্রহ্ম) এর একতা উপলব্ধি করতে বলেন। এ বিষয়ে তার অনেক গ্রন্থ রয়েছে, বিশেষ করে ব্রহ্মসূত্রভাষ্য, গীতাভাষ্য, অ Upanishad ভাষ্য, যা তার দর্শনকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছে।


🏛 মঠ প্রতিষ্ঠা ও ধর্মীয় বিপ্লব

শঙ্করাচার্য কেবল একজন আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন না, বরং তিনি বহু মঠ (অধ্যাত্মিক আশ্রম) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর মঠগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল অদ্বৈত মঠ (অথবা শঙ্করাচার্য মঠ), যা ভারতে আধ্যাত্মিক শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তিনি চারটি প্রধান মঠ প্রতিষ্ঠা করেন:

  1. শ্যামাল মঠ (পূর্ব ভারতে)
  2. দক্ষিণ মঠ (দক্ষিণ ভারতে)
  3. মধ্যম মঠ (মধ্য ভারতে)
  4. উত্তর মঠ (উত্তর ভারতে)

এই মঠগুলি আজও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে ভারতীয় সমাজে প্রভাব ফেলছে।


🕊 শঙ্করাচার্যের দর্শনের প্রভাব

শঙ্করাচার্যের দর্শন তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরও বিশাল প্রভাব ফেলেছে। তার তত্ত্বসমূহ একদিকে যেমন জ্ঞানী মহাজনের মধ্যে গভীরভাবে গেঁথে গিয়েছে, তেমনই সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় ঐক্য এবং আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। তিনি হিন্দু ধর্মের একতা এবং শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার শিক্ষা ছিল একাত্মতার, ধর্মীয় বৈষম্য দূর করার এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে আধ্যাত্মিক শান্তি পৌঁছানোর। 🕉


🌍 শেষ জীবনের দিক ও মৃত্যু

শঙ্করাচার্যের জীবনের শেষ সময় ছিল প্রাপ্তবয়স্ক এবং আধ্যাত্মিক দিক থেকে পূর্ণ। তিনি মৃত্যুর আগেই তার শিষ্যদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু ৮৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে হয়েছিল, যদিও তার মৃত্যুর সঠিক সময়ের বিষয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। তার মৃত্যুর পর তার শিষ্যরা তার শিক্ষা এবং দর্শন ব্যাপকভাবে প্রচার করতে থাকেন।


FAQ (প্রশ্নোত্তর)

প্রশ্ন ১: শঙ্করাচার্য কি ধরণের দর্শন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তর: শঙ্করাচার্য অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা বলে যে, সব কিছু এক ব্রহ্মের অংশ এবং জগত মায়া বা অবাস্তব।

প্রশ্ন ২: শঙ্করাচার্য কতটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তর: শঙ্করাচার্য ৪টি প্রধান মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—শ্যামাল মঠ, দক্ষিণ মঠ, মধ্যম মঠ, এবং উত্তর মঠ।

প্রশ্ন ৩: শঙ্করাচার্য কীভাবে ভারতের ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তর: শঙ্করাচার্য তার অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের মাধ্যমে ভারতের ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা বৈষম্য ও বিভাজন দূর করতে সাহায্য করেছিল।

প্রশ্ন ৪: শঙ্করাচার্যের প্রধান গ্রন্থগুলি কী কী?
উত্তর: শঙ্করাচার্যের প্রধান গ্রন্থগুলি হল ব্রহ্মসূত্রভাষ্য, গীতাভাষ্য, এবং Upanishad ভাষ্য


🔚 উপসংহার

শঙ্করাচার্য এক মহান আধ্যাত্মিক গুরু, যার দর্শন ও শিক্ষা আজও পৃথিবীজুড়ে প্রভাব ফেলছে। তিনি হিন্দু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক, এবং তার অদ্বৈত বেদান্ত দর্শন মানুষকে আত্মপরিচয়ের পথে পরিচালিত করেছে। তার প্রতিষ্ঠিত মঠগুলি আজও আধ্যাত্মিক জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে। শঙ্করাচার্যের জীবনী ও দর্শন মানুষকে একতা, শান্তি এবং আত্মজ্ঞান অর্জনের দিকে প্রবণ করেছে। 🕊