🧬🌿 চার্লস ডারউইনের জীবনী

“বিবর্তন” শব্দটি যার নামের সঙ্গে চিরকাল জড়িয়ে থাকবে

👶 শৈশব ও প্রারম্ভিক জীবন

🔹 নাম: চার্লস রবার্ট ডারউইন
🔹 জন্ম: ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৮০৯
🔹 জন্মস্থান: শ্রুসবেরি, শ্রপশায়ার, ইংল্যান্ড 🇬🇧
🔹 পিতা: রবার্ট ডারউইন (চিকিৎসক)
🔹 মাতা: সুজানা ওয়েজউড

চার্লস ডারউইন একটি বিত্তশালী ও শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারে বিজ্ঞান ও দর্শনের চর্চা ছিল প্রবল। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রকৃতি ও প্রাণীদের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখাতেন।

📚 তিনি প্রথমে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা পড়তে যান, কিন্তু অপারেশনের রক্ত দেখতে না পেরে সেই অধ্যয়ন ছেড়ে দেন। পরে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব (Theology) পড়তে যান।

কিন্তু তাঁর মনের টান ছিল প্রাকৃতিক ইতিহাস ও জীববিজ্ঞানের দিকে। 🎒

🚢 বিগল যাত্রা: জীবন বদলে দেওয়া অভিযান

১৮৩১ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি HMS Beagle নামে একটি জাহাজে বিশ্বভ্রমণে বের হন। এই ভ্রমণ ছিল পাঁচ বছরের।

🌍 তিনি দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ পরিদর্শন করেন।

🦎 গ্যালাপাগোস দ্বীপ ছিল তাঁর গবেষণার মোক্ষম ক্ষেত্র। সেখানে বিভিন্ন দ্বীপে নানা রকম ফিঞ্চ পাখি দেখে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন— কেন একই পাখির এত রকম বৈচিত্র্য?

এই যাত্রায় সংগ্রহ করা জীববৈচিত্র্য ও Fossil-এর নমুনা ভবিষ্যতের জন্য এক বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের বীজ বপন করেছিল।

🧠 বিবর্তন তত্ত্বের উন্মেষ

📖 ১৮৫৯ সালে, বহু বছরের চিন্তা ও গবেষণার পর তিনি প্রকাশ করেন নিজের বিখ্যাত গ্রন্থ—
“On the Origin of Species by Means of Natural Selection”

এখানে তিনি বলেন—

🌿 "জীবজগতের সমস্ত প্রাণী একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে ধাপে ধাপে, প্রকৃতির নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়েছে।"

📌 তার মূল মতবাদ ছিল:

• Natural Selection (প্রাকৃতিক নির্বাচন)
• Survival of the Fittest (যোগ্যতমের টিকে থাকা)
• Common Descent (সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভব)

এই তত্ত্ব এতটাই বিপ্লবী ছিল যে, এটি শুধু জীববিজ্ঞানের চেহারাই পাল্টে দেয়নি, বরং ধর্ম, দর্শন ও সমাজচিন্তাতেও গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

📚 অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনা

ডারউইনের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হল—

1. The Descent of Man – মানুষ ও বানরের সাধারণ পূর্বপুরুষ বিষয়ক
2. The Expression of the Emotions in Man and Animals – প্রাণীদের অনুভূতি নিয়ে গবেষণা
3. The Variation of Animals and Plants under Domestication

📌 তিনি তার গবেষণায় ধীরে সুস্থে এগোতেন। কিছু গবেষণার ফল প্রকাশে ২০ বছরেরও বেশি সময় নিয়েছেন, যাতে তা প্রমাণসহ উপস্থাপন করা যায়।

❤️ ব্যক্তিগত জীবন

👩‍❤️‍👨 ডারউইন ১৮৩৯ সালে তাঁর কাজিন এমা ওয়েজউডকে বিয়ে করেন। তাঁদের ১০টি সন্তান ছিল, যার মধ্যে কয়েকজন ছোটবেলাতেই মারা যায়।

🛏️ তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন—জীবনের বেশিরভাগ সময়ই পেটের রোগে ভুগেছেন। তা সত্ত্বেও, গবেষণা ও লেখালেখি চালিয়ে গেছেন।

🧬 বিজ্ঞান জগতে বিপ্লব

চার্লস ডারউইনের “বিবর্তন তত্ত্ব” আজ জীববিজ্ঞানের মেরুদণ্ড।

🧠 তিনি ছিলেন একাধারে:

• প্রকৃতিবিদ
• ভূতত্ত্ববিদ
• জীববিজ্ঞানী
• দার্শনিক

📌 তাঁর তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষও অন্যান্য প্রাণীর মতই বিবর্তনের ফলাফল।
এই চিন্তা তৎকালীন সমাজে প্রচণ্ড বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।

🏅 সম্মাননা ও স্বীকৃতি

🎓 যদিও জীবিত অবস্থায় বহু সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন, পরবর্তীকালে তাঁর কাজ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কীর্তি হিসেবে গণ্য হয়।

🪦 ১৮৮২ সালে মৃত্যুর পর তাঁকে ইংল্যান্ডের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবিতে আইজ্যাক নিউটনের পাশে সমাহিত করা হয়।

🌐 আজ তাঁর নামেই:

• Darwin Day (১২ ফেব্রুয়ারি)
• Darwin Awards
• বহু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রের নামকরণ করা হয়েছে।

❓ FAQ – চার্লস ডারউইন সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: চার্লস ডারউইনের সবচেয়ে বিখ্যাত তত্ত্ব কী?
👉 “বিবর্তন তত্ত্ব” বা Evolution by Natural Selection।

প্রশ্ন ২: তিনি কোন বইটি লিখে বিশ্ববিখ্যাত হন?
👉 “On the Origin of Species” (১৮৫৯)

প্রশ্ন ৩: মানুষ সম্পর্কে ডারউইন কী বলেন?
👉 মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল।

প্রশ্ন ৪: বিবর্তন তত্ত্ব ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কেন বিতর্কিত ছিল?
👉 কারণ এটি ঈশ্বরকেন্দ্রিক সৃষ্টি তত্ত্বের বিরোধিতা করে।

প্রশ্ন ৫: তাঁর গবেষণার মূল জায়গা কোনটি ছিল?
👉 গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ আমেরিকা।

🔚 উপসংহার

🌿 চার্লস ডারউইন ছিলেন এমন একজন বিজ্ঞানী, যাঁর চিন্তা ও গবেষণা শুধু জীববিদ্যাকে নয়, মানব সভ্যতার দৃষ্টিভঙ্গিকেও পাল্টে দিয়েছে।

📚 তার "বিবর্তন তত্ত্ব" আধুনিক জীববিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।

🌍 আজকে পৃথিবীর প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার ও বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে ডারউইনের অবদান অপরিহার্য।

🧠 তিনি প্রমাণ করেছেন— প্রশ্ন করা, দেখা, পর্যবেক্ষণ ও যুক্তি প্রয়োগই সত্য আবিষ্কারের পথ।

💬 তাঁর বিখ্যাত উক্তি:

“It is not the strongest of the species that survives, nor the most intelligent, but the one most responsive to change.”