🌾 জসীম উদ্দীন-এর জীবনী | পল্লীকবির এক অনন্য জীবনকথা 🎶📚

👶 জন্ম ও শৈশবকাল

জসীম উদ্দীন (Jasim Uddin) জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি, ফরিদপুর জেলার (বর্তমানে বাংলাদেশে) তাম্বুলখানা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আনসার উদ্দীন মোল্লা এবং মাতার নাম আমিনা খাতুন।

👦 ছোটবেলা থেকেই গ্রামীণ বাংলার প্রকৃতি, নদী, মাঠ, মেঘলা আকাশ আর লোকজ সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল তাঁর মনে। এই প্রভাবই তাঁর ভবিষ্যতের কবিতায় ফুটে উঠেছে প্রাণবন্তভাবে।

📚 শিক্ষা জীবন

জসীম উদ্দীন ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর কলকাতার সিটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর এম.এ থিসিস ছিল “গ্রাম্য গান” – যা পরবর্তীতে বাংলার লোকসাহিত্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

📜 তিনি ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে গবেষণা করে বাংলার পল্লীগীতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন।

🖋️ সাহিত্যিক জীবন ও কীর্তি

জসীম উদ্দীন মূলত গ্রামীণ জীবন, প্রেম, দুঃখ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে লিখেছেন। তাঁকে বলা হয় বাংলার পল্লীকবি 🐓🌾, কারণ তাঁর কবিতায় বাংলার গ্রামীণ চিত্র সবচেয়ে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।

📕 উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম:

• নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯) — তাঁর বিখ্যাত কাব্যনাট্য। এটি বাংলার সাহিত্যে এক যুগান্তকারী সৃষ্টি হিসেবে গণ্য হয়। 🌾
• সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) — প্রেম, ধর্ম এবং সামাজিক সংঘাত নিয়ে রচিত অসাধারণ কাহিনি। ❤️⛵
• ধানক্ষেত (১৯৬৩) — কৃষকের জীবনের প্রতিচ্ছবি।
• মাটির কান্না (১৯৫১) — গ্রামবাংলার ব্যথা-বেদনা।

🗣️ লোকসাহিত্য সংগ্রাহক

তিনি বাংলার প্রান্তিক অঞ্চলের অসংখ্য লোকগান সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করেন। তাঁর এসব কাজ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণে অমূল্য ভূমিকা রেখেছে।

🎭 কর্মজীবন

জসীম উদ্দীন বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তিনি রেডিও, শিক্ষা বিভাগ ও পল্লী উন্নয়ন দফতরেও কাজ করেছেন।

📻 ১৯৪৪ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে কাজ শুরু করেন এবং বাংলা সাহিত্যে তার অবদান বাড়াতে থাকেন।

🏅 পুরস্কার ও সম্মাননা

জসীম উদ্দীনের সাহিত্যকীর্তির জন্য তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন:

🏆 একুশে পদক (১৯৭৬)
🏆 বাংলাদেশ স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর)
🏆 ভারত সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার
🏆 বাংলা একাডেমি পুরস্কার
🏆 পাকিস্তান সরকারের ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ পুরস্কার

👨‍👩‍👧 পারিবারিক জীবন

তিনি ১৯৩৩ সালে মুত্তুননেসা বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তানদের মধ্যে আছেন জনপ্রিয় সাহিত্যিক ও লেখক আসিফ জসীম।

🪦 মৃত্যু

জসীম উদ্দীন ১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে ফরিদপুরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে সমাধিস্থ করা হয়।

📍 তাঁর সমাধির পাশেই রয়েছে তাঁর স্মৃতিসৌধ এবং যাদুঘর, যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পাণ্ডুলিপি ও চিত্রকর্ম।

💬 বিখ্যাত উক্তি

"আমি কবি, আমি লোকের কথা বলি। গ্রাম আমার প্রাণ।"

❓ FAQ – প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি

প্রশ্ন ১: জসীম উদ্দীন কাকে বলা হয়?

উত্তর: জসীম উদ্দীনকে বলা হয় "পল্লীকবি", কারণ তাঁর কবিতা ও সাহিত্যে বাংলার গ্রামীণ জীবনের স্বতন্ত্র রূপ ফুটে উঠেছে।

প্রশ্ন ২: তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম কোনটি?

উত্তর: "নকশী কাঁথার মাঠ" তাঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ সাহিত্যকর্ম।

প্রশ্ন ৩: তিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন?

উত্তর: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

প্রশ্ন ৪: তাঁর কবিতায় মূলত কোন বিষয়বস্তু উঠে আসে?

উত্তর: বাংলার গ্রামীণ জীবন, প্রেম, দুঃখ, চিরন্তন সম্পর্ক ও লোকজ ঐতিহ্য।

প্রশ্ন ৫: তিনি কি স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

উত্তর: তিনি সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না, তবে তাঁর সাহিত্যকর্ম জাতীয় চেতনা ও বাংলার মাটির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

🔚 উপসংহার

জসীম উদ্দীন ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি কাব্যে তুলে ধরেছেন বাংলার মাটির ঘ্রাণ, নদীর কলতান, কৃষকের ক্লান্ত মুখ, আর প্রেম-বিরহের নিঃসঙ্গতা। তিনি শুধুই কবি নন, ছিলেন বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য ধারক ও বাহক।

🌾 তাঁর কবিতা আজও প্রতিটি গ্রামবাংলার হৃদয়ে বাজে—নীরব দুপুরে, ধানের মাঠে, কুঁড়েঘরের উঠোনে। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অমর, অক্ষয়। 🙏