🧮 পশান্তচন্দ্র মহলানবীশের জীবনী

👶 জন্ম ও শৈশবকাল

🔹 পূর্ণ নাম: পশান্তচন্দ্র মহলানবীশ
🔹 জন্ম: ২৯ জুন ১৮৯৩
🔹 জন্মস্থান: কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ)
🔹 পিতা: প্রফুল্লচন্দ্র মহলানবীশ
🔹 মাতা: নিরুপমা দেবী

🐣 পশান্তচন্দ্র মহলানবীশের জন্ম এক সংস্কৃতিমনস্ক ও শিক্ষিত পরিবারে। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও কৌতূহলী। তাঁর পরিবারে সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং শিক্ষার গভীর প্রভাব ছিল।

📘 শিক্ষা জীবন

🎓 পশান্তচন্দ্র কলকাতার পূর্ব বিদ্যালয় (Presidency College) থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হন। পরে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত এবং পদার্থবিদ্যায় পড়াশোনা করেন। এই সময়েই তিনি পরিসংখ্যানের (Statistics) প্রতি গভীর আগ্রহ অনুভব করেন।

📚 তিনি পরিসংখ্যান শাস্ত্রের প্রতি অনুরাগ জন্মান সেখানকার একটি সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে, এবং পরে সেই শাস্ত্রকেই নিজের আজীবনের সাধনার বিষয় বানান।

📊 কর্মজীবন ও অবদান

📈 ভারতীয় পরিসংখ্যানের জনক

পশান্তচন্দ্র মহলানবীশকে বলা হয় “ভারতীয় পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের জনক”। তিনি পরিসংখ্যানকে শুধুমাত্র একাডেমিক বিষয় হিসেবে দেখেননি, বরং বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ দেখিয়ে দিয়েছিলেন।

🏢 Indian Statistical Institute (ISI)

📍 ১৯৩১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন Indian Statistical Institute (ISI)। এটি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি। পরিসংখ্যানচর্চাকে তিনি একাডেমিক ও প্রয়োগমূলক — দুই দিকেই এগিয়ে নিয়ে যান।

🧮 মহলানবীস দূরত্ব (Mahalanobis Distance)

🌟 তাঁর বিখ্যাত গবেষণার মধ্যে অন্যতম ছিল “মহলানবীস দূরত্ব” (Mahalanobis Distance)। এটি পরিসংখ্যান, ডেটা সায়েন্স ও প্যাটার্ন রিকগনিশনে আজও বহুল ব্যবহৃত হয়।

📊 সেনসাস এবং সার্ভে

তিনি ১৯৩৭ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে (NSS) চালু করেন, যা ভারতীয় জনগণের আর্থ-সামাজিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনে।

🏛️ সরকারী ভূমিকায় অবদান

🇮🇳 স্বাধীন ভারতের পরিকল্পনায় পশান্তচন্দ্র মহলানবীশ একটি গুরুত্বপূর্ণ মুখ। তিনি ছিলেন প্ল্যানিং কমিশনের পরামর্শদাতা এবং দ্বিতীয় পাঁচ-সালার পরিকল্পনার মূল রূপকার। তার "Mahalanobis Model" ছিল ভারতে শিল্পায়নের ভিত্তি।

🛠️ তাঁর মডেল অনুসারে ভারতে ভারী শিল্পে বিনিয়োগ এবং উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল প্রভাব ফেলে।

✈️ আন্তর্জাতিক খ্যাতি

🌍 পশান্তচন্দ্র মহলানবীশ কেবলমাত্র ভারতের গণ্ডিতে আবদ্ধ ছিলেন না। তিনি UNESCO, United Nations Statistical Commission, এবং বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।

🎖️ তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক পরিসংখ্যানবিদ যার সঙ্গে কাজ করার জন্য বহু আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী মুখিয়ে থাকতেন।

📚 লেখক ও চিন্তাবিদ

পশান্তচন্দ্র মহলানবীশ বিজ্ঞান ছাড়াও দর্শন, সাহিত্য ও সমাজতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং বিশ্বভারতীতে শিক্ষকতাও করেছেন।

📖 তিনি বহু গবেষণা প্রবন্ধ ও বই রচনা করেন, যেগুলি আজও বিভিন্ন পরিসংখ্যান কোর্সে পাঠ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

🏅 পুরস্কার ও সম্মাননা

পশান্তচন্দ্র মহলানবীশের অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হন।

🏆 পদ্মবিভূষণ (১৯৬৮)
🏅 ফেলো, রয়াল সোসাইটি (F.R.S.)
🎓 হেনরি ডিউন্যান পদক
📜 ভারত রত্নের জন্য প্রস্তাব থাকলেও তা জীবিতাবস্থায় দেওয়া হয়নি — পরবর্তীতে তাঁর অবদানের মূল্যায়ন বেড়েছে বহুগুণে।

❓ FAQ – পশান্তচন্দ্র মহলানবীশ সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন

প্রশ্ন ১: পশান্তচন্দ্র মহলানবীশ কে ছিলেন?
উত্তর: তিনি একজন বিশিষ্ট ভারতীয় পরিসংখ্যানবিদ এবং ভারতীয় পরিসংখ্যানের জনক হিসেবে পরিচিত।

প্রশ্ন ২: তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত অবদান কী?
উত্তর: তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত অবদান হলো "Mahalanobis Distance" ও Indian Statistical Institute (ISI) প্রতিষ্ঠা।

প্রশ্ন ৩: মহলানবীস মডেল কী?
উত্তর: এটি ছিল ভারতে ভারী শিল্পকেন্দ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়নের একটি মডেল, যা দ্বিতীয় পাঁচ-সালার পরিকল্পনার ভিত্তি।

প্রশ্ন ৪: তিনি কোন আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছেন?
উত্তর: তিনি রয়াল সোসাইটির ফেলো (F.R.S.) নির্বাচিত হন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সংস্থায় সদস্য ছিলেন।

প্রশ্ন ৫: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব ছিল, এবং তিনি বিশ্বভারতীতেও শিক্ষকতা করেছেন।

🔚 উপসংহার

🐾 পশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ছিলেন এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা — যিনি বিজ্ঞানের সীমা ছাড়িয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভিত গড়ে দেন। তিনি শুধুমাত্র একটি বিজ্ঞানী ছিলেন না, ছিলেন এক চিন্তাবিদ, এক পথপ্রদর্শক। তাঁর চিন্তাভাবনা, পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ এবং পরিকল্পনামূলক মডেল আজও দেশের নীতি নির্ধারণে প্রাসঙ্গিক।

🎖️ ভারতবর্ষের উন্নয়নে পশান্তচন্দ্র মহলানবীশের মতো মানুষদের অবদান চিরস্মরণীয়। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা বলতে পারি — “পরিসংখ্যান যে শুধু সংখ্যা নয়, তা পশান্তচন্দ্র মহলানবীশ আমাদের শিখিয়েছেন।”