🏛️ রামনাথ কোবিন্দ এর জীবনী — সংবিধানের রক্ষক থেকে জাতির অভিভাবক

রামনাথ কোবিন্দ ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন এক নিঃস্বার্থ সমাজসেবক, নিপাট ভদ্রলোক, এবং সংবিধানপ্রেমী রাজনীতিক। একজন দলিত পরিবারের সন্তান হয়েও যেভাবে তিনি দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন হন — সেটাই তার জীবনকে করে তুলেছে আদর্শের প্রতীক। ✊

👶 শৈশব ও প্রারম্ভিক জীবন

🔹 জন্ম: ১ অক্টোবর, ১৯৪৫
🔹 জন্মস্থান: পরৌখ গ্রাম, কানপুর দেহাত, উত্তরপ্রদেশ
🔹 পিতা: মাইকু লাল কোবিন্দ (একজন ছোট কৃষক ও আয়ুর্বেদিক ডাক্তার)
🔹 মাতা: কালাবতী দেবী

রামনাথ কোবিন্দ ছোটবেলা থেকেই খুবই সংযমী ও বিনয়ী ছিলেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। কাঁচা ঘরে, মাটির দেয়ালে, জ্বালানি কাঠের চুলায় রান্না হতো তাদের ঘরে। এমন পরিবেশেই গড়ে ওঠে এই মনীষার শৈশব। 🌾

📚 শিক্ষাজীবন

🔹 গ্রামের স্কুলে পড়াশোনার সূচনা।
🔹 পরে কানপুর ইউনিভার্সিটি থেকে কমার্সে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
🔹 এরপর আইনে স্নাতক (LLB) ডিগ্রি অর্জন করেন।
🔹 দিল্লি হাইকোর্টে ও পরে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। ⚖️

তিনি সরকারি চাকরির পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু দিল্লি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে সেই চাকরি ত্যাগ করেন। 🎓

👨‍⚖️ আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন

রামনাথ কোবিন্দ ১৯৭১ সালে দিল্লি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেন।
🔹 সুপ্রিম কোর্টে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেন।
🔹 কেন্দ্রীয় সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত।

তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, দলিত, নারীদের জন্য সবসময় কাজ করতেন, বিনা পারিশ্রমিকে আইনি সহায়তা দিতেন। 💼

🏛️ রাজনৈতিক যাত্রা

🎯 ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)-তে প্রবেশ

১৯৯১ সালে তিনি BJP-তে যোগ দেন। সেখান থেকেই তার রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয়।
🔹 রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ১৯৯৪ সালে।
🔹 টানা ১২ বছর রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন (দুইবার)।
🔹 তিনি সংসদের বহু গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে কাজ করেছেন যেমন - আইন, সামাজিক ন্যায়, পেট্রোলিয়াম, ইত্যাদি।

🌍 রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পূর্বে রাজ্যপাল পদ

🔹 ২০১৫ সালে তিনি বিহারের রাজ্যপাল (Governor) হিসেবে নিযুক্ত হন।
🔹 অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ ও নিরপেক্ষ প্রশাসক হিসেবে তার প্রশংসা হয়।

🇮🇳 ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে অভিষেক

🗳️ নির্বাচন ও বিজয়

২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি NDA-র পক্ষ থেকে প্রার্থী হন এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন।
🔹 তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মীরা কুমার (কংগ্রেস)।
🔹 তিনি ২৫ জুলাই ২০১৭ সালে ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।

👉 তিনি ভারতের দ্বিতীয় দলিত রাষ্ট্রপতি, এবং BJP-র মনোনীত প্রথম রাষ্ট্রপতি।

🔑 রাষ্ট্রপতি হিসেবে অবদান

একজন রাষ্ট্রপতি হিসেবে রামনাথ কোবিন্দ ছিলেন সংবিধানপ্রেমী, নৈতিকতায় দৃঢ় এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 🇮🇳

📌 তার সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্ত:

• জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ অনুমোদন
• সিএএ (CAA) সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়া
• কৃষি আইন পাশ ও বিতর্ক
• বহু আন্তর্জাতিক সফর এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা

🎓 শিক্ষায় উৎসাহ

তিনি শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা এবং প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে বিশেষভাবে মনোযোগী ছিলেন।

🧑‍🤝‍🧑 ব্যক্তিজীবন

🔹 স্ত্রী: সবিতা কোবিন্দ
🔹 সন্তান: ১ পুত্র, ১ কন্যা
🔹 জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সরল ও নিরহঙ্কার। নিজের গ্রামের মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন সবসময়।

🏅 সম্মান ও জনপ্রিয়তা

রামনাথ কোবিন্দ তার বিনয়ী স্বভাব, সততা ও দায়বদ্ধতা দিয়ে সারা দেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন।
তিনি নিজেকে কখনও প্রজাদের উপরে মনে করেননি। বরং, মানুষের প্রতিনিধি ও সেবক হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরেছেন।

🗺️ রামনাথ কোবিন্দের আন্তর্জাতিক সফর

রাষ্ট্রপতি থাকাকালে তিনি বহু দেশে সফর করেছেন —
➡️ ইথিওপিয়া
➡️ জাম্বিয়া
➡️ অস্ট্রেলিয়া
➡️ নেপাল
➡️ ভিয়েতনাম
➡️ জাপান

এই সফরগুলোর মাধ্যমে তিনি ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করেন। 🌏

❓ FAQ — প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

Q1: রামনাথ কোবিন্দ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
👉 উত্তরপ্রদেশের কানপুর দেহাত জেলার পরৌখ গ্রামে।

Q2: তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে কোন পদে ছিলেন?
👉 তিনি বিহারের রাজ্যপাল ছিলেন।

Q3: তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
👉 তিনি কমার্সে স্নাতক ও পরে LLB করেন।

Q4: রামনাথ কোবিন্দ কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন?
👉 ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)-র সদস্য ছিলেন।

Q5: তিনি ভারতের কততম রাষ্ট্রপতি ছিলেন?
👉 তিনি ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি।

Q6: তিনি কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন?
👉 তিনি ছিলেন দলিত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।

✨ উপসংহার

রামনাথ কোবিন্দের জীবন এক অনন্য দৃষ্টান্ত — যেখানে লড়াই, শিক্ষা, নৈতিকতা এবং মানবসেবার এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে সমাজের পিছিয়ে থাকা অংশ থেকেও একজন মানুষ কেবলমাত্র মেধা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছাতে পারেন। 🏆

তিনি ভারতীয় গণতন্ত্রের এক শক্ত ভিত, যিনি নীরবে, শান্তভাবে ইতিহাস গড়ে গেছেন।

👉 আজকের যুবসমাজ তার জীবন থেকে শিখতে পারে — সীমাবদ্ধতা থাকলেও সাহস হারানো চলবে না, কারণ আদর্শ আর সততা কখনো ব্যর্থ হয় না।